Tuesday, August 21, 2012
«হযরত মোহাম্মাদ সাল্লালাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম»
জন্মঃ৫৭০ খ্রিঃ মক্কার কোরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্ম গ্রহন করেন।
মাতাঃআমিনা
পিতাঃআব্দুল্লাহ
....................................................
শৈশব ও কৈশোর কাল:
তত্কালীন আরবের রীতি ছিল
যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায়
বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ
এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই
দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন
মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত
নিতেন। এই রীতি অনুসারে মোহাম্মদকেও
হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম
হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়।
এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায়
হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন
করতে সমর্থ হন। তখনকার
একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য - শিশু মোহাম্মদ
কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন
এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য
রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মোহাম্মদকে আমিনার
কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই
মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু
মুহাম্মাদকে হালিমার
কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও
চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল।
ইসলামী বিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন পরই
একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে - একদিন শিশু
নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের
করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার
যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত। এই ঘটনার পরই
হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার
কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ
হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান।
এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয়
ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের
সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর
জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল।
আমিনা ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী
উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ
পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত
করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ
করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল
মোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায়
পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের
দেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের
বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার
পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব
দিয়ে যান। আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের
নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার
সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদের বয়স
যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার
সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য
বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা।
যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ
আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব
উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের
রাজধানী বসরা অনেক দিক
দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার
গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার
মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময়
তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ
নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফুজ্জারের
যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত
হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময়
থেকেই তিনি কিছু একটি করার
চিন্তাভাবনা শুরু করেন।
...................................................
নবুয়ত-পূর্ব জীবন
আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা,
খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের
জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মাদ এতে যোগদান
করেন এবং এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার
ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ
বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোন
পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত
তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল
বনি সা'দ গোত্রের। কয়েক কিরাত
পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায়
বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও
চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই
একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এতই
খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার
উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী । ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া , বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন। মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন
খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত
হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য
সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মাদ
এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত
বসরা পর্যন্ত যান। খাদীজা মাইছারার মুখে মুহাম্মাদের
সততা ও ন্যায়পরায়ণতার
ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন।
এছাড়া ব্যবসায়ের
সফলতা দেখে তিনি তার
যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয়
বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের
কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার
কাছে শুনে মুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার
অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন।
মুহাম্মাদ তাঁর চাচাদের
সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০
আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫। খাদীজার
জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।
খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের ৬ জন সন্তান
জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন
মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া,
উম্মে কুলসুম', ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়।
মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায়
এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র
ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই
মৃত্যুবরণ করে। মুহাম্মাদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন
কা'বা গৃহের পূনঃনির্মাণের
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ
কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ
শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন
করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন
হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর)
পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই
বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের
লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল
কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু
হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের
কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু
হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ
অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই
মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন
প্রত্যুষে মসজিদে হারামের
দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার
সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন
মুহাম্মাদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ
করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়।
আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল।
যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ
অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন।
তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ
হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের
ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন
কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন
এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর
উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।
....................................................
নবুওয়ত প্রাপ্তি
চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের
নবী মুহাম্মাদ নবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ
এই সময়েই স্রষ্টা তার কাছে ওহী প্রেরণ
করেন। নবুওয়ত
সম্বন্ধে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য
পাওয়া যায় আজ-জুহরির বর্ণনায়। জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারে নবী সত্য
দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন। ত্রিশ
বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর নবী প্রায়ই
মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন
অবস্থায় কাটাতেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন।
এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী
নিয়ে আসেন। জিব্রাইল তাঁকে এই
পংক্তি কটি পড়তে বলেন:
....
...
...
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার
নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।
সৃষ্টি করেছেন
মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
পাঠ করুন, আপনার
পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের
সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
শিক্ষা দিয়েছেন
মানুষকে যা সে জানত না।
...
...
...
উত্তরে নবী জানান যে তিনি পড়তে জানেন
না, এতে জিব্রাইল
তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন
এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু
এবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার
কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মাদ
পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। অবর্তীর্ণ হয়
কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের
প্রথম পাঁচ আয়াত। প্রথম অবতরণের পর
নবী এতই ভীত হয়ে পড়েন
যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের
গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার
বলতে থাবেন, "আমাকে আবৃত কর"।
খাদিজা নবীর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস
করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন।
ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ
চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের
কাছে যান। নওফেল তাঁকে শেষ
নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে।
ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী। তারপর আবার
অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য।
একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর
কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে। এবার
অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্সির-এর
কয়েকটি আয়াত। এর পর
থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ। এই ইসলাম ছিল
জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্য
প্রেরিত একটি আদর্শ ব্যবস্থা। তাই এর
প্রতিষ্ঠার পথ ছিল খুবই বন্ধুর। এই
প্রতিকূলততার মধ্যেই নবীর মক্কী জীবন
শুরু হয়।
....................................................আরো পড়ুন: http://bn.m.wikipedia.org/wiki/মুহাম্মাদ
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment