অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ
অ্যাডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল
জার্মানির সীমান্তবর্তী ব্রাউনাউ-আম-ইন
গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম
ছিল Alois ও মায়ের নাম ছিল Klaaraa.
হিটলারের বাবা ছিলেন জারজ সন্তান। যতটুকু জানা যায়, আলোইসের
মা মারিয়া আন্না ও সিকেলগ্রাবার
প্রতিবেশি মিলশ্রমিক জোয়ান জর্জ
হিটলারের মিলিত ফসল এই আলোইস হিটলার।
সে হিসেবে হিটলারের দাদা ছিলেন
একজন ইহুদি। হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪
থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত জার্মানির ফিউরার
ছিলেন। বুদ্ধিজীবী, উন্নত সংস্কৃতি এবং শ্রমিক
আন্দোলনকে মনেপ্রাণে ঘৃণাকারী ব্যাক্তি ছিলেন
হিটলার। ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন
ভীষণ রগচাটা, একগুঁয়ে ও জেদি।
মা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব বন্ধন
ছিন্ন করে হিটলার চলে যান ভিয়েনায়। ভিয়েনায় থাকাকালিন সময়েই তার মনের
মধ্যে প্রথম জেগে উঠে ইহুদিবিদ্বেষ। ১৯১২ সালে ভিয়েনা ছেড়ে হিটলার
চলে আসেন মিউনিখে। সেখানে অনেক দুঃখ-
কষ্টে ২ বছর অতিবাহিত হয় হিটলারের।
১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলার
সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর
তিনি যোগ দেন লেবার পার্টিতে। এক বছরের মধ্যেই তিনি এ পার্টির প্রধান হন। পার্টির
নাম পরিবর্তন করে রাখেন ন্যাশনাল
সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি।
পরবর্তীতে এই পার্টিকেই
বলা হত নাৎসি পার্টি। হিটলারের নাৎসি পার্টির
জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে যেন আর
কোন রাজনৈতিক দল না থাকে। কিন্তু তার এ
ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে কারাবন্দি হন হিটলার।
এক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ,
ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র
বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই একসময়
জনপ্রিয় নেতায় পরিনত হন হিটলার। এক
বছরের মধ্যেই পুরো জার্মানি তিনি নিজের
নিয়ন্ত্রনে নেন। নাৎসিরা তাদের বিরোধীপক্ষের অনেককেই
হত্যা করেছিল, দেশের
অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক
বাহিনীকে নতুন নতুন অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত
করেছিল
এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদি ও ফ্যাসিবাদি একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল।
হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহন
করেছিলেন যাতে সকল জীবন্ত অঞ্চলকে দখল
করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির
পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার
হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৩৫ সালে নতুন আইন
চালু করে দেশের নাগরিকদের
দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। এ
আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১৯৩৯ সালের ১
সেপ্টেম্বর জার্মান
বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমন করে। এই দিন
থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
বিশ্বজুড়ে গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক
দেশ দখল করতে থাকেন হিটলার। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালে হিটলার
বাহিনী রাশিয়া আক্রমন করে।
প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ
করলেও মিত্রশক্তি যখন
সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন
হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে। অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫
সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিনত
হয়। হিটলারের রাজ্যজয় ও
বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারনে লক্ষ লক্ষ
মানুষকে প্রান হারাতে হয়। ৬০
লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়। হিটলার বাহিনী ৬০ লক্ষ ইহুদি ছাড়াও
সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট,
রোমানি ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) জনগন,
অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগন,
প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের উপর এই অমানবিক গণহত্যা পরিচালিত করে।
নাৎসি অত্যাচারের সকল
ঘটনা আমলে নিলে নিহতের
সংখ্যা দাড়াতে পারে নব্বই লক্ষ থেকে এক
কোটি দশ লক্ষের মত। ইহুদি নিধনের এই
ঘটনা ইতিহাসে "হলোকষ্ট" নামে পরিচিত। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ
দিনগুলিতে হিটলার বার্লিনে ছিলেন। রেড
আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল
সে রকম একটা সময়ে হিটলার তার
প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন।
ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। বিয়ের পর হিটলার তার সঙ্গীদের
সঙ্গে শ্যাম্পেন পান করেন। তারপর
দুটি চিঠি লিখেন। একটিতে সবকিছুর জন্য
তিনি ইহুদিদের দায়ি করেন
এবং অপরটিতে নিজের সব
সম্পত্তি তিনি পার্টিকে দান করে দেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সাল। বার্লিনের চারদিক
অবরোধ করে ফেলেছে লালফৌজ। হিটলার
বুঝতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে তিনি লালফৌজ
বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। এদিন
বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাঙ্কার
থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সাথে শেষবারের মত
দেখা করে আসেন। এসময় তিনি তার
সহযোগীদের বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার
লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের
অংশের কোন চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষন
পরেই গুলির শব্দ শোনা যায়। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার
সদ্য বিবাহিতা বউ
ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। চারদিক থেকে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের
দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল
দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে যান এবং এ
অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন
লাগিয়ে দেন। গোটা বিশ্বধ্বংসের
খেলা শেষ করে নিজেই শেষ হয়ে যান অ্যাডলফ হিটলার। তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া, দৈনিক যুগান্তর ও কয়েকটি ওয়েবসাইট
অনুসন্ধান করুনঃ
ফেসবুকে যোগ দিনঃ
হৃদয়ের অন্তস্থল থেকেঃ
জনপ্রিয় লেখাঃ
বিভাগঃ
- ই বুক (12)
- ইসলামিক (24)
- ওয়েব ডিজাইন (15)
- কবিতা (6)
- গল্প (11)
- গান (6)
- গিনেস বুক অফ ওয়াল্ড রেকডস (20)
- জীবনি (3)
- টিপস এন্ড ট্রিকস (41)
- টেক সংবাদ (62)
- ডাওনলোড (3)
- তথ্য প্রযুক্তি (9)
- প্রাণী বৈচিত্র্য (31)
- ফান জোন (3)
- বিস্ময়কর তথ্য (2)
- মোবাইলীয় (46)
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment