এক ডলার সাতাশি সেন্ট। এটুকুই সব। এর
মধ্যে ষাট সেন্ট আছে পেনিতে। একেক
সময়ে একটি দুইটি করে পেনি বাঁচানো হয়েছে মুদি দোকানী,
সবজী বিক্রেতা আর কশাইয়ের সাথে তীব্র দর
কশাকশি করে, এমন করেই পুঙ্খানুপুঙ্খ লেনদেন
চলেছে সব সময়, যতক্ষন পর্যন্ত না মনে মনে কৃপণ ঠাওরে তাদের মুখ আরক্তিম
হয়ে উঠেছে। ডেলা তিনবার গুনে দেখেছে।
এক ডলার সাতাশি সেন্ট। অথচ পরের দিন
ক্রিসমাস। মলিন ছোট আরাম কেদারাটার উপর
এগুলো ছুড়ে ফেলে চিৎকার
করে কান্না কাটি করা ছাড়া আর কোনো উপায়
নেই। ডেলা তাই করল। এটা মানুষের নৈতিক
অভিব্যক্তিকে এমনভাবে প্ররোচিত করে যেন,
জীবনটা ফুঁপিয়ে কাঁদা, দীর্ঘ শ্বাস আর মৃদু হাসির সম্মিলনে গড়া, যেখানে দীর্ঘ
শ্বাসটাই বেশি প্রবল। বাড়ীর গৃহকর্ত্রী যখন খরচ ক্রমশ প্রথম
থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনেন,
প্রথমেই তার নজর পড়ে বাড়ির দিকে।
একটি সুসজ্জিত ফ্ল্যাটের জন্য
প্রতি সপ্তাহে আট ডলার গুনতে হয়।
যারা দিন আনে দিন খায় ঠিক তাদের জন্য নয়, কিন্তু ভিক্ষুকের দলের জন্য
নিশ্চিতভাবেই অন্য কোনো উপায়
খুঁজে দেখতে হবে। প্রবেশ কক্ষের নীচে যে চিঠির
বাক্সটি আছে সেখানে কখনো কোনো চিঠি আসে না,
বৈদুতিক বোতামটি কোনো পার্থিব আঙুল
টিপে কখনো ঘন্টা বাঁজায় না। এর
নীচে অধিকার নিয়ে একটি নাম ফলক
শোভা পাচ্ছে, যাতে লেখা “মি. জেমস ডিলিংহাম ইয়াং”। আগেকার সমৃদ্ধ সময়ে “ডিলিংহাম” নামের
এই বাড়িটি প্রমোদ উল্লাসের মৃদুমন্দ
বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে, যখন এর মালিক
সপ্তাহে ত্রিশ ডলার পেত। এখন, যখন আয়
কমে কুড়ি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে,
“ডিলিংহাম” এর অক্ষরগুলোও ঝাপসা দেখাচ্ছে, যেন তারাও
ঐকান্তিকভাবেই প্রত্যাশা করছে সংকুচিত
হয়ে যেয়ে নিরহঙ্কারী ও বিনয়ী “ডি” হতে।
কিন্তু যখনই মি. জেমস ডিলিংহাম
ইয়াং বাড়িতে ফেরেন এবং তাঁর এই
ফ্ল্যাটে আসেন, তাঁকে ডাকা হয় “জিম” এবং নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন মিসেস জেমস
ডিলিংহাম ইয়াংয়ের, যিনি ইতোপূর্বেই
আপনাদের কাছে পরিচিত হয়েছেন “ডেলা”
নামে। যেখানে সবকিছুই খুব
ভালোভাবে চলছে। ডেলা তাঁর কান্না শেষ হলে, পাউডারের
ন্যাকড়াটা দিয়ে গাল মুছলো। জানালার
পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিরানন্দ নিয়ে ধূসর
বাহিরবাড়ির ধূসর বেড়ার উপর দিয়ে ধূসর
বিড়ালটিকে হেঁটে যেতে দেখল। আগামীকাল
ক্রিসমাসের দিন, কিন্তু তাঁর কাছে আছে মাত্র এক ডলার সাতাশি সেন্ট,
যা দিয়ে জিমের জন্য উপহার কিনতে হবে।
সে প্রত্যেকটা পেনি বাঁচিয়ে মাসের পর মাস
ধরে, এই টাকাটা জমিয়েছে।
কুড়ি ডলারে সপ্তাহ বেশি দূর চলে না।
সে যা হিসাব করে, খরচ তার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। সব সময়ই এমন হয়।
মাত্র এক ডলার সাতাশি সেন্ট আছে জিমের
জন্য উপহার কেনার। তাঁর জিম। সে অনেক
সুখী সময় কাটিয়েছে পরিকল্পনা করে করে,
কিছু চমৎকার জিনিস নিয়ে জিমের জন্য। কিছু
সুন্দর, দুর্লভ এবং খাঁটি…কিছু এমন একটা জিনিস, যা জিমের মর্যাদার সাথে খুব
কাছাকাছি মানিয়ে নেয় এমন মূল্যবান। কক্ষটির দুই জানালার মাঝে বৃহদাকার
লম্বাটে একটি আয়না আছে। এই ধরণের
বৃহদাকার লম্বাটে আয়না আপনি সম্ভবত আট
ডলারের ফ্ল্যাটগুলোতে দেখতে পাবেন। খুব
কৃশকায় এবং খুব চটপটে একজন নারী, দ্রুত
একের পর এক তাঁর পরিধেয় বস্ত্রগুলো লম্বালম্বিভাবে খুলে নগ্ন
হয়ে তাঁর প্রতিবিম্ব দেখেলে,
তিনি দেখতে কেমন সম্পূর্ণভাবে তার
একটা নিখুত ধারণা পেতে পারে।
ডেলা কৃশকায় হওয়ায়, এই কৌশলটি প্রয়োগ
করত। হঠাৎকরেই
সে জানালা থেকে সরে এসে আয়নার
সামনে দাঁড়াল। উজ্জ্বলভাবে তাঁর
চোখদুটি ঝিলিক দিচ্ছিল, কিন্তু
কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর মুখের রঙ
হারিয়ে গেল। দ্রুত সে তাঁর চুল টেনে নামিয়ে পূর্ন দৈর্ঘ্যে পড়তে দিল। বর্তমানে, দুটি সম্পদ আছে জেমস ডিলিংহাম
ইয়াংয়ের অধিকারে, যার উভয়েই বড় গর্বের
ধন। একটি জিমের স্বর্ণের ঘড়ি, যা ছিল তাঁর
পিতার এবং পিতামহের। অন্যটি ডেলার চুল।
যদি শেবার রানী ঘুলঘুলির
পাশে একটি ফ্ল্যাটে বাস করতেন, তবে ডেলা তাঁর চুল শুকানোর জন্য
সেগুলোকে তাঁর জানালার
সামনে ঝুলিয়ে রাখতো কিছুদিন,
এতে মহামান্যার গহনা ও উপহারগুলোর মূল্য
পড়ে যেত। যদি রাজা সলোমন তাঁর ভূ-গর্ভস্থ
কক্ষগুলোতে জমানো গুপ্তধনের দ্বাররক্ষী হতেন, তবে জিম সে স্থান
দিয়ে যাবার সময় প্রত্যেকবার তাঁর
ঘড়িটি দেখিয়ে আসতো, শুধুমাত্র দেখার জন্য
কেমন করে তিনি হিংসায় তাঁর
দাড়ি ধরে টানেন। ডেলার সুন্দর চুলগুলো এখন তাঁর শরীরের
উপরে পড়ে আছে, যেন জলপ্রপাতের পিঙ্গল
জলের মত মৃদু হিল্লোল তুলে ঝিলিক দিচ্ছে।
চুলগুলো তাঁর হাঁটুর নীচে নামে এবং পোষাক
হয়ে প্রায়ই যেন তাঁর শরীরকে ঢেকে দেয়।
সে বিচলিত হয়ে দ্রুত আবার তাঁর শরীরকে চুলগুলো দিয়ে ঢাকলো। হঠাৎ সে এক
মিনিটের মত কেঁপে উঠে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো,
এক দুই ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল জীর্ণ
লাল কার্পেটটিতে। পুরনো পিঙ্গল জ্যাকেটটি পড়ে, পুরনো পিঙ্গল
হ্যাটটি মাথায় দিয়ে সে বের হল। দ্রুত
আবর্তিত হয়ে আসা স্কার্ট
পড়ে এবং এখনো দীপ্তিময় উজ্জ্বল
চোখদুটি নিয়ে, এলোমেলো অবস্থায় সে দড়জার
বাইরে এলো এবং সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নামল। একটা সাইনবোর্ডের সামনে এসে সে থামলো,
“মিসেস সফরোনী। সকল ধরণের কেশ
সামগ্রী”। একরকম
উড়ে দৌড়ে চলে সে হাঁপিয়ে উঠলো। মাদাম,
দীর্ঘ, খুব শাদা, আকর্ষণীয়া, কদাচিৎ
দেখা মিলে “সফরোনী”। “আপনি কি আমার চুল কিনবেন?”,
ডেলা জিজ্ঞেস করে।
“আমি চুল কিনি”, মাদাম বলল। “আপনার
হ্যাটটি খুলে আমাকে একবার দেখতে দিন
এটি দেখতে কেমন?”
পিঙ্গল জলপ্রপাত মৃদু হিল্লোল তুলে নীচে নেমে এল।
“কুড়ি ডলার”, মাদাম বলল, নিপুন
হাতে একগোছা চুল উপরে তুলে ধরল।
“আমাকে টাকাটা এখনই দিন”, ডেলা বলল। আহা, নষ্ট পাথুরে সময়কে ভুলে গিয়ে, এর
পরের দুই ঘন্টা ধরে সে যেন গোলাপী ডানায়
ভর করে নেচে বেড়ালো। দোকানগুলোতে তন্ন
তন্ন করে জিমের জন্য উপহার খুঁজে বেড়ালো। অবশেষে সে উপহারটি খুঁজে পেল।
এটি নিশ্চিত জিমের জন্যই বানানো হয়েছে,
অন্য কারো জন্য নয়। অন্য দোকানগুলোতে এর
মত আর একটিও নেই, সে তাদের সবগুলোই
উল্টে পাল্টে দেখেছে। এটি ছিল
প্ল্যাটিনামের ঘড়ির চেইন, নকশায় সহজ ও সরল, কেবল বস্তুমান বিচারেই
যথার্থভাবে এর তাৎপর্য প্রকাশ করছিল,
বাহ্যিক চাকচিক্যময় অলঙ্করণে নয়…
যেমনটা সকল উৎকৃষ্ট পণ্যের হওয়া উচিত।
এটি এমনকি ঘড়িটার জন্যও প্রয়োজনীয় ছিল।
সে এটি দেখতে না দেখতেই মনে করল, এটি অবশ্যই জিমের জন্য। এটা তাঁর মতো।
বর্ণাধিক্যহীন এবং মূল্যবান…
দুটি বিশেষণই এর জন্য প্রযোজ্য। তাঁর
কাছে থেকে তারা এটির জন্য একুশ ডলার নিল
এবং সাতাশি সেন্ট
নিয়ে সে তাড়াতাড়ি করে বাড়িতে ফিরল। কেউ সঙ্গে থাকলে, ঘড়ির সেই
পুরোনো চেইনের কারনে জিম অবশ্য
পুরোপুরি চিন্তিত থাকত সময় দেখার
ব্যপারে। ঘড়িটার মতই দেখতে মস্ত বড়,
চেইনের পরিবর্তে পুরোনো চামড়ার
ফিতা ব্যবহার করায়, জিম মাঝে মাঝে ঘড়িটা গোপনে দেখত। ডেলা বাড়িতে ফিরলে, তাঁর
উন্মত্ততা কিছুটা পরিণামদর্শিতা ও কারণ
বিশ্লেষণের অবসর পেল। সে তাঁর ইস্পাতের
চুল ছাটাইয়ের কাচি বের করে গ্যাসের
বাতি জ্বালালো, এর পর, তাঁর ভালোবাসায়
অসীম মহত্ব যোগ করতে যেয়ে যে ধ্বংসস্তুপ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা মেরামতের কাজ
চালিয়ে গেল। প্রিয় বন্ধুরা, এটা সব সময়ই
একটা সুমহৎ কাজ….একটি মস্ত বড় কাজ। চল্লিশ মিনিটের মধ্যে তাঁর
মাথা অতি ক্ষুদ্র, ঠিক
অনেকটা কোঁকড়ানো চুলের মত
গুচ্ছে ঢেকে গেল, চমৎকার দেখাচ্ছিল
তাঁকে যেন সে একজন নিয়মিত স্কুল
পালানো বালক। সে আয়নায় তাঁর প্রতিবিম্বের দিকে সময় নিয়ে, যত্নের
সাথে এবং সমালোচনার দৃষ্টিতে তাঁকালো। “যদি জিম আমাকে হত্যা না করে”,
সে নিজেকেই বলল, “আমার দিকে তাঁকানোর
আগে সে এক সেকেন্ড সময় নেবে, এর পর বলবে,
তোমাকে কনি দ্বীপের গীতিনাট্যের
বালিকাদলের বালিকার মত লাগছে। কিন্তু
কি করতে পারতাম আমি…আহা! এক ডলার সাতাশি সেন্ট নিয়ে কি করতে পারতাম
আমি?” সাতটার সময় কফি বানানো হল। মাছ ভাঁজার
কড়াই গরম চুলোর উপর রেখে চপ বানানোর
জন্য প্রস্তুত করা হল। জিমের ফিরতে কখনো দেরি হয় না।
ডেলা ঘড়ির চেইনটি হাতে নিয়ে দুই ভাঁজ
করে দড়জার কাছে টেবিলের এক কোণে বসল,
যেখান দিয়ে দিয়ে সে সব সময় প্রবেশ
করেন। এরপরে, সিঁড়িতে সে তাঁর প্রথম বার
পা ফেলার আওয়াজ পেয়ে কিছু মুহূর্তের জন্য ফ্যাকাশে হয়ে গেলেন। প্রতিদিনের
সাদামাটা বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর ছোট নীরব
প্রার্থনা পড়ার অভ্যাস ছিল, এবং এখন
সে ফিসফিস করে প্রার্থনা করল,
“দয়া কর,ইশ্বর, সে যেন
ভাবে আমি দেখতে এখনো সুন্দর।” দড়জা খুলে গেল, জিম প্রবেশ করে এটি বন্ধ
করল। তাঁকে কৃশকায় ও খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিল।
দুর্বল মানুষ, বয়স মাত্র বাইশ …
একটি পরিবারের ভার বয়ে ভারাক্রান্ত!
তাঁর একটি নতুন ওভারকোটের প্রয়োজন,
কোনো দাস্তানা নেই। জিম দড়জার দিকে কয়েক পা পিছিয়ে গেলেন,
নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন,
যেভাবে একটি দীর্ঘ লোমওয়ালা সেটের
জাতের কুকুর তিতিরের গন্ধ পেলে নিশ্চল
হয়ে যায়। তাঁর চোখ দুটি ডেলার উপরে স্থির
হয়ে আছে, সেখানে এমন একটি অভিব্যক্তি যা ডেলা পড়তে পারছে না,
এতে সে ভীত হয়ে পড়ছে। এটা রাগ নয়, নয়
বিস্ময়, নয় অননুমোদন, নয় আতঙ্ক, নয় এমন
ধরণের অনুভূতির অভিব্যক্তি যার জন্য
ডেলা প্রস্তুত ছিল। মুখে সেই বিচিত্র
অভিব্যক্তি নিয়ে, সে সহজাতভাবে স্থির দৃষ্টি নিয়ে ডেলার দিকে তাঁকিয়ে আছে। ডেলা কাঁচুমাঁচু করে টেবিল থেকে উঠে তাঁর
দিকে এগিয়ে গেল।
“জিম, প্রিয়তম”, সে কেঁদে উঠল, “আমার
দিকে এভাবে তাঁকিও না। আমি আমার চুল
কাটিয়েছি এবং সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি কারন
ক্রিসমাসের ভিতর তোমাকে কোনো উপহার না দিয়ে আমি থাকতে পারবো না।
এগুলো আবার বড় হয়ে উঠবে…তুমি কিছু মনে কর
না, করবে কি? এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল
না আমার। আমার চুল ভয়ানক দ্রুত বেড়ে উঠে।
বল,’মেরি ক্রিসমাস!’ জিম, চল আমরা আনন্দ
করি। তুমি জাননা কতটা চমৎকার – কতটা সুন্দর, চমৎকার উপহার তোমার জন্য
আমি এনেছি”। “তুমি তোমার চুল কাটিয়েছো?”, অনেক কষ্ট
করে, জিম জিজ্ঞেস করে, যেন
বাস্তবিকপক্ষেই এখনো স্পষ্ট ধারনায়
পৌছতে পারছে না, এমন কি কঠিনতম মানসিক
পরিশ্রমের পরও। “কাটিয়েছি এবং এগুলো বিক্রি করে দিয়েছি”,
ডেলা বলল। “তুমি কি আমাকে এভাবে পছন্দ
করছ না, কোনোভাবেই? আমার চুল গেলেও
আমিই তো আছি, আমি নেই?” জিম উৎসুকভাবে কক্ষের চারিদিকে তাঁকালো।
“তুমি বলছ তোমার চুল গেছে?”, প্রায় চরম
নির্বোধোচিত হয়ে সে বলল।
“এটি খুঁজে আর কাজ নেই তোমার”, ডেলা বলল,
“এটি বিক্রি হয়ে গেছে,
আমি তোমাকে বলছি… বিক্রি হয়েছে, চলেও গিয়েছে। বোকাছেলে, এটা ক্রিসমাস ইভ।
আমার দিকে ভালো করে তাঁকাও, এর জন্যই
তোমাকে দিতে পেরেছি। সম্ভবত আমার
মাথার চুল কমে গিয়েছিল”, সে হঠাৎকরেই
গভীর মিষ্টি সুরে বলে চলল, “কিন্তু কেউ
কখনো গুনে দেখতে পারবে না কতটা ভালোবাসা রাখা আছে তোমার জন্য। আমি কি তোমার জন্য চপ সাঁজাবো,
জিম?” এই অস্বাভাবিক মোহগ্রস্ত অবস্থার
বাইরে জিমকে মন হল দ্রুত জেগে উঠছে।
সে তাঁর ডেলাকে জড়িয়ে ধরল। দশ সেকেন্ড
ধরে আসুন আমরা অন্য ক্ষেত্রের কিছু
অগুরুরত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক নীরিক্ষার
সাথে মনোযোগ দেই। এক সপ্তাহে আট ডলার কিংবা বছরে দশ লক্ষ ডলার…
পার্থক্যটা কোথায়? এক জন গনিতবিদ
বা একজন আইনজ্ঞ আপনাকে ভুল উত্তরটি দিবে।
মেজাইয়েরা অনেক উপহার নিয়ে আসে, কিন্তু
সেগুলো অর্থের মধ্যে নেই। কিছু পরেই এ দৃঢ়
অন্ধ উক্তি আলোকিত হয়ে উঠবে। জিম তাঁর ওভারকোটের ভিতর
থেকে একটি পার্সেল বের করে টেবিলের উপর
ছুড়ে মারল। “কোনো ভুল করো না, ডেল”, সে বলল, “আমার
ক্ষেত্রে, আমি মনে করি না কোনো হেয়ারকাট,
শেভ বা শ্যাম্পু আমার বউয়ের প্রতি আমার
ভালোবাসা একটুও কমাতে পারবে। কিন্তু
যদি তুমি পার্সেলটি খুলে দেখো,
তুমি বুঝতে পারবে কেন একটু আগে আমাকে অমন করতে দেখে ছিলে?”
ফর্সা আঙুলগুলো ক্ষিপ্র গতিতে সুতো এবং কাগজ
ছিড়ে ফেলল। একটি পরম আনন্দিত চিৎকার
এবং এর পরে, আহা! খুব দ্রুত নারীসুলভ
পরিবর্তিত উন্মত্ত চোখের জল এবং বিলাপ,
ইশ্বরের সান্তনা দানের সকল ক্ষমতার তাৎক্ষনিক প্রয়োগ এই ফ্ল্যাটে প্রয়োজনীয়
হয়ে পড়েছে। এটি ছিল চিরুনি…চিরুনির সেট, পার্শ্বে ও
পিছনে দাঁত, যার কামনায় ডেলা দীর্ঘ দিন
ধরে দোকানের জানালায় চেয়ে থেকেছে।
চমৎকার চিরুনি, কচ্ছপের খাঁটি খোলকের
সাথে অলঙ্করিত বাঁট… সুন্দর সুশোভিত কেশের
পরিধেয় ছায়া। সে জানত চিরুনিগুলো খুব দামী এবং কোনো আশা নেই জেনেও
এগুলো পাবার জন্য তাঁর হৃদয়ে ছিল ব্যাকুল
কামনা ও বাসনা। এখন এগুলো তাঁর আছে, কিন্তু
যে দীর্ঘ কেশ সাঁজানোর জন্য এটি প্রয়োজন
ছিল, সেই প্রবল কামনার ধন হারিয়ে গেছে। কিন্তু সে এগুলোকে তাঁর বুকের
মাঝে জড়িয়ে ধরল,
অবশেষে সে ঝাপসা চোখে তাঁকাতে পারল
এবং মৃদু হেসে বলল, “আমার চুল খুব দ্রুত বাড়ে,
জিম!” এর পর ডেলা ছ্যাঁকা খাওয়া ছোট বিড়ালের
মত লাফিয়ে কেঁদে উঠল, “আহা, আহা!” জিম তাঁর সুন্দর উপহারটি এখনো দেখে নি।
ডেলা তাঁর হাতের
খোলা তালুতে এটি রেখে জিমের
সামনে মেলে ধরল। তাঁর উজ্জ্বল ও অতিশয়
আকুল আত্নার প্রতিফলিত আলোর ছটায়
মনে হচ্ছিল অনুজ্জ্বল মূল্যবান ধাতুটি চমকে উঠবে। “এটা কি খুব চমৎকার নয়, জিম?
এটি খুঁজে পেতে আমি সারা শহর
চষে বেড়িয়েছি। এখন তোমাকে সময়
দেখতে যেয়ে প্রতিদিন এটিকে একশ বার
দেখতে হবে। তোমার ঘড়িটি আমাকে দাও।
তোমার ঘড়িতে এটি কেমন দেখায় আমি দেখতে চাই”। ডেলার অনুরোধ না রেখে, জিম হুড়মুড়
করে গদিওয়ালা চেয়ারটায় বসে পড়ল
এবং মাথার নিচে হাত দুটি রেখে মৃদু হাসল। “ডেল”, সে বল, “চল আমাদের ক্রিসমাসের
উপহারগুলোকে সাঁজিয়ে রাখি। এখন এগুলোর
ব্যবহার খুব একটা প্রীতিকর নয়। তোমার
চিরুনি কেনার টাকা যোগার
করতে যেয়ে আমি ঘড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি।
মনে কর, এখন তোমাকে চপগুলো সাঁজাতে হবে”। আপনারা জানেন, মেজাইয়েরা জ্ঞানি মানুষ
ছিলেন…বিস্ময়কর রকম
জ্ঞানি মানুষ..যারা গোশালার শিশুর জন্য
উপহার নিয়ে এসেছিলেন। ক্রিসমাসে উপহার
প্রদান কৌশল তাঁরা আবিষ্কার করেন।
তাঁরা জ্ঞানী হওয়ায়, নিঃসন্দেহে তাঁদের দেওয়া উপহারও জ্ঞানগর্ভ, দুটো একই বস্তুর
ক্ষেত্রে এটি বিনিময়ের সম্ভাব্য সুযোগ
প্রদান করে।
এখানে আমি অছিলা আকারে আপনাদের
সাথে সম্পর্যুক্ত হয়েছি এমন একটি বিরল
ঘটনাপঞ্জীতে যেখানে একটি ফ্ল্যাটের দুই বোকা শিশু তাঁদের বাড়ীর সর্বাধিক মূল্যবান
সম্পদ সর্বাধিক অজ্ঞানীভাবে একে অপরের
জন্য উৎসর্গ করেছে। কিন্তু আজকের দিনের
জ্ঞানীরা শেষ কথা হিসেবে এটাই বলবে,
যারা উপহার দিয়েছে তাঁদের মধ্যে এই
দুইজনই সবেচেয়ে জ্ঞানী। যারা উপহার দিয়েছে এবং পেয়েছে, তাঁদের সকলের
মধ্যে এরাই সবচেয়ে জ্ঞানী। সবক্ষেত্রেই
তাঁরা সবচেয়ে জ্ঞানী। তাঁরাই মেজাই।
অনুসন্ধান করুনঃ
ফেসবুকে যোগ দিনঃ
হৃদয়ের অন্তস্থল থেকেঃ
জনপ্রিয় লেখাঃ
বিভাগঃ
- ই বুক (12)
- ইসলামিক (24)
- ওয়েব ডিজাইন (15)
- কবিতা (6)
- গল্প (11)
- গান (6)
- গিনেস বুক অফ ওয়াল্ড রেকডস (20)
- জীবনি (3)
- টিপস এন্ড ট্রিকস (41)
- টেক সংবাদ (62)
- ডাওনলোড (3)
- তথ্য প্রযুক্তি (9)
- প্রাণী বৈচিত্র্য (31)
- ফান জোন (3)
- বিস্ময়কর তথ্য (2)
- মোবাইলীয় (46)
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment