Monday, August 13, 2012

ডিজিটাল কাঁটায় আটকে যাবে অপরাধীর গাড়ি

Leave a Comment
রাতের ঢাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবার
ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করছে পুলিশ। উন্নত
বিশ্বের আদলে রাস্তায় লুমিনেটেড চেকপোস্ট
বসিয়ে চালানো হচ্ছে অপরাধী পাকড়াও
অভিযান। ডিজিটাল সিস্টেমে রিমোট
নিয়ন্ত্রিত এই চেকপোস্টের মাধ্যমে দ্রুতগতির গাড়ি রাস্তায়
থামিয়ে দেওয়া সম্ভব। কোনো গাড়ির
গতিবিধি বেপরোয়া বা সন্দেহজনক
মনে হলে এই পদ্ধতিতে ওই গাড়ির
চাকা পাংচার করে সন্দেহভাজনকে চ্যালেঞ্জ
করবে পুলিশ। রাজধানীর আটটি ক্রাইম
বিভাগে চলতি মাসে শুরু হয়েছে এই চেকপোস্ট
অভিযান। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাধারণ
মানুষ ‘ডিজিটাল চেকপোস্ট’ হিসেবে পুলিশের
এ ব্যবস্থাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন।
তবে কেউ কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, চেকপোস্ট পরিচালনাকারী মাঠ পর্যায়ের
পুলিশ কর্মকর্তাদের
অতিউত্সাহে বিষয়টি যেন সাধারণ
পথচারীদের কাছে বিড়ম্বনার কারণ
হয়ে না দাঁড়ায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সন্ত্রাসীরা এখন আগের
চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। ছোট-বড়
সব সন্ত্রাসীর গাড়ি রয়েছে। মোটরসাইকেল
থেকে শুরু করে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার
করছে তারা। এমনকি সংসদ সদস্য ও
সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি হাঁকাচ্ছে তারা। এ
সন্ত্রাসীরা রাতের ফাঁকা রাস্তায় পুলিশের
চেকপোস্টের তোয়াক্কা করে না।
তারা চেকপোস্ট দেখলেই গাড়ির গতি আরও
বাড়িয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়। তখন
পুলিশের পক্ষে চ্যালেঞ্জ করার মতো তেমন সামর্থ্য থাকে না। ফলে রাতভর কষ্ট
করে যে চেকপোস্ট অভিযান চালানো হয়,
তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হচ্ছিল। এসব বিষয়
বিবেচনা করে উন্নত প্রযুক্তির এই চেকপোস্ট
আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতালি ও থাইল্যান্ড থেকে প্রাথমিকভাবে ৩৫টি লুমিনেটেড
চেকপোস্ট এনে তা দিয়ে ২০ জুলাই থেকে কাজ
শুরু করা হয়েছে। ডিএমপির আটটি অপরাধ
বিভাগের ডিসিদের অধীনে এই
চেকপোস্টগুলো ভাগ করে রাখা হয়েছে। যেদিন
যেখানে প্রয়োজন সেদিন সেখানেই তা কাজে লাগানো হবে। এর জন্য কোনো পূর্ব
ঘোষণা থাকবে না।
বরং সন্ত্রাসী বা অপরাধীরা যাতে জানতে না পারে সে জন্য
মাঝেমধ্যেই এই চেকপোস্ট
নিয়ে ঝটিকা অভিযান চালানো হবে।
ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ডিজিটাল এই চেকপোস্টের কয়েকটি অংশ
রয়েছে। এর মধ্যে ধারাল মোটা কাঁটা সংবলিত
লুমিনেটেড ম্যাট রাস্তার ওপর
আড়াআড়িভাবে পাতা থাকবে। এর
সঙ্গে থাকবে সার্কিট। এটি রিমোট কন্ট্রোল
সিস্টেমে অপারেট করা হবে। এর কিছু আগে খুঁটি আকৃতির লম্বা লাইট পোস্ট থাকবে।
লাল-নীল লাইটিংয়ের রিফ্লেকশনে চলন্ত
গাড়ির চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
পরে দাঁড়ানোর সঙ্কেত দেওয়া হবে। কেউ
যদি গাড়ি না থামিয়ে চলে যাওয়ার
চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে রিমোটের সুইচ টেপা হবে। তখনই রাস্তায়
বিছানো ধারালো স্পাই (লোহার এক প্রকার
কাঁটা) একসঙ্গে অনেকগুলো বিঁধে যাবে গাড়ির
টায়ারে। সঙ্গে সঙ্গে চাকা পাংচার
হয়ে যাবে। সশস্ত্র পুলিশ দল তখনই চ্যালেঞ্জ
করবে অপরাধীদের। নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের
গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের
ডিসি মাসুদুর রহমান জানান, রাতের
অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আধুনিক এ
পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অপরাধীরা বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট কার
নিয়ে ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে।
বিশেষ করে রাতে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার
পর তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এ জন্য এই
ব্যবস্থা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশও
প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ডিএমপি সূত্র জানায়,
বর্তমানে রাজধানীতে রাতের নিরাপত্তায়
শতাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। তবে এই চেকপোস্ট
কার্যক্রম সব সময় চোখে পড়ে না। কোনো বড়
ঘটনা ঘটলে অথবা বিশেষ
দিনক্ষণে তত্পরতা দেখা যায়। কোনো কোনো চেকপোস্টে আবার হয়রানির
অভিযোগও পাওয়া যায়। এ
ছাড়া এলাকাভিত্তিক পুলিশ টহলেরও
ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায়
রাতে টহল পুলিশের
দেখা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment